করোনাভাইরাসের তাণ্ডবের মধ্যেই শেষ হলো ভারতের বিধানসভা নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে অংশ নেন বিনোদন জগতের একঝাঁক তারকা। রুপালি পর্দা ছেড়ে রাজনীতির জগতে পা রাখতেই অনেকে পেয়ে যান নীলবাড়ির লড়াইয়ের টিকিট। তা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে জেলা বা স্থানীয় স্তরের কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভের মুখেও পড়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।
তবে সে বাধা সত্ত্বেও প্রচারের কাজে কোমর বেঁধে নেমে পড়া তারকা প্রার্থীদের মাঠে-ময়দানে দেখা গেছে। তাদের ঘিরে মানুষের ভিড়, ছবি তোলার হিড়িক দেখে আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি প্রত্যাশাও বেড়েছিল অনেকটা। তবে সকলের ক্ষেত্রে ভোটবাক্সে দেখা মেলেনি সেই ভিড়। কেমন হল তারকাদের ভোট-ফলাফল?
বাবুল সুপ্রিয়: টালিগঞ্জে গিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিলে, কিন্তু পারলেন না। বিজেপির এই তারকা প্রার্থী পরাজিত হলেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৫১ হাজার ৩৬০। সেখানে বিজয়ী অরূপ বিশ্বাস পেয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৪৪০ ভোট।
রুদ্রনীল ঘোষ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্রয় থেকে সরে এসেছিলেন। বিজেপি তাকে লড়তে পাঠিয়েছিল মমতার পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুরে। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিদায়ী বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কড়া রোদে অক্লান্ত পরিশ্রমও করেছিলেন, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ৪৪ হাজার ৭৮৬টি ভোট পেয়েছেন তিনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৫০৫ ভোট।
সায়নী ঘোষ: তৃণমূল প্রার্থী সায়নীকে রীতিমতো দৌড়ে প্রচার করতে দেখেছেন এলাকার মানুষ। সেই সায়নী পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৩৯৪ ভোট। এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলেছে দুই তারকা প্রার্থীর।
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়: বেহালা পশ্চিমে হেভিওয়েট নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে দাঁড়াতে পারলেন না বিজেপির এই তারকা প্রার্থী। রাজনীতিতে নবাগতা শ্রাবন্তী প্রথমেই বিধানসভার টিকিট পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি কাজে লাগাতে পারলেন না। তার প্রাপ্ত ভোট যেখানে ৬৩ হাজার ৮৯৪, সেখানে পার্থ পেয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৭৮ ভোট।
দেবদূত ঘোষ: টালিগঞ্জের আরও এক তারকা প্রার্থী এবারে ভোটে লড়েছেন। তিনি সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাবুলের থেকে মাত্র ১০ হাজার ৭৬৩ ভোটে পিছিয়ে তৃতীয় হয়েছেন তিনি।
লকেট চট্টোপাধ্যায়: চুঁচুড়া বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী লকেট। হুগলির ফল নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী ছিল গেরুয়া শিবির। নিজের কেন্দ্র নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন লকেটও। কিন্তু গণনার শুরু থেকেই ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকেন তিনি। তার প্রাপ্ত ভোট ৯৮ হাজার ৬৮৭। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের অসিত মদুমদার ১ লাখ ১৭ হাজার ১০৪টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
হিরণ চট্টোপাধ্যায়: দিলীপ ঘোষের ‘গড়’ পুনরুদ্ধার করলেন বিজেপির তারকা প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। বিপরীত হাওয়ার মধ্যেও যা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরকে। খড়্গপুর সদরে ৩ হাজার ৭৭১ ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়েছেন তিনি।
জুন মালিয়া: মেদিনীপুরে জেতার ব্যাপারে আশাবাদী ছিল বিজেপি। সেখানে কিন্তু ফল আশানরূপ হয়নি। বরং ২৩ হাজার ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া।
পায়েল সরকার: বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে টক্কর দিতে বিজেপি নিয়ে আসে টলিউড অভিনেত্রী পায়েল সরকারকে। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে ৩৭ হাজারের বেশি ভোটে জিতে যান রত্না। পায়েলের প্রাপ্ত ভোট ৭৩ হাজার ৫৪০। রত্না পেয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৯৬৮ ভোট।
অঞ্জনা বসু এবং লাভলি মৈত্র: সোনারপুর দক্ষিণ লড়াই দেখল এই দুই তারকা প্রার্থীর। বিজেপির অঞ্জনা শেষমেশ ৮৩ হাজার ৪১টি ভোট পান। তৃণমূলের লাভলি পান ১ লাখ ৯ হাজার ২২২ ভোট।
অগ্নিমিত্রা পাল: আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে লড়াই হয়েছে দুই তারকা প্রার্থীর। একদিকে ছিলেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল। আরেক দিকে ছিলেন তৃণমূলের সায়নী ঘোষ। এই কেন্দ্রে একটুর জন্য হেরেছে তৃণমূলে। অগ্নিমিত্রা পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮৮১ ভোট।
রাজ চক্রবর্তী: আবির্ভাবেই বাজিমাত করলেন তৃণমূলের এই তারকা প্রার্থী। ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রমণি শুক্লকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি। জয়ের ব্যবধান ৯ হাজার ২২২ ভোট।
পার্নো মিত্র: তৃণমূল প্রার্থী তাপস রায়ের কাছে ৩৫ হাজার ১৪৭ ভোটে হেরে গেছেন বিজেপির এই তারকা প্রার্থী। বরাহনগর কেন্দ্রে তার প্রাপ্ত ভোট ৫০ হাজার ৪৬৮।
তনুশ্রী চক্রবর্তী: দিলীপ ঘোষ, মিঠুন চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারে ছুটে বেরিয়েছেন। তা সত্ত্বেও লাভ হলো না। শ্যামপুরে বিজেপির এই তারকা প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৮৩ হাজার ২৯৩। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৮০৪টি ভোট।
পাপিয়া অধিকারী: তৃণমূল প্রার্থীর সামনে দাঁড়াতে পারলেন না বিজেপির এই তারকা প্রার্থীও। ৭৩ হাজার ৪৪২টি ভোট পেয়েছেন তিনি। সেখানে তৃণমূলের পুলক করের প্রাপ্ত ভোট ১ লাখের কিছু বেশি।
যশ দাশগুপ্ত: চন্ডীতলা কেন্দ্রে ঘরের ছেলে হয়ে ওঠার চেষ্টায় বিন্দুমাত্র ফাঁক রাখেননি যশ। প্রচারে তাকে ঘিরে যে উচ্ছ্বাস চোখে পড়েছিল ভোটবাক্সে তার প্রতিফলন দেখা গেল না। ৬১ হাজার ৭৭১টি ভোট পেয়েছেন তিনি। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী প্রায় দ্বিগুণ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
কৌশানী মুখোপাধ্যায়: কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা আসনে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের কাছে হেরে গিয়েছেন তিনি। কৌশানীর প্রাপ্ত ভোট ৭৪ হাজার ২৬৮। মুকুল পেয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭টি ভোট।